নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রদলের আসন্ন কমিটির দুই পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড় ফ্লাইওভারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতাদের দাবি, চাঁদাবাজি নয়, ছোট ভাইয়ের পাওনা টাকা আদায় করেছেন তারা।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা হলেন জাকির হোসেন। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। অপর অভিযুক্ত নেতা তাকবির আহমেদ ইমন। তিনি আইবিএ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়াও রাবি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহবায়ক সদস্য। তারা দুজনেই শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা হলেন- মনিরুল ইসলাম জয় ও সাব্বির হোসেন। জয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। সাব্বির হোসেনও সামজকর্ম বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড় এলাকায় জাকির ও তাকবিরসহ ১০-১২ জন তাদেরকে রড দিয়ে মারধর ও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখান। পরে তাদের কাছ থেকে জোর করে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১০ হাজার একশত টাকা নিয়ে নেন।
তাদের কাছ থেকে ছাত্রদল নেতাদের টাকা নেওয়ার একটি স্কিনশর্ট পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন, যে ছেলেটা অভিযোগ করেছে তার কাছে আমার ছোট ভাই সাজু টাকা পেত। সে আমাকে বলে, ও তো আমার টাকাটা দিচ্ছে না। গড়িমসি করছে। আমাদের সঙ্গে একটু বসেন। আমি ছেলেপেলে নিয়ে নিয়মিত অক্ট্রয় মোড়ে বসি। সেখানে আমি ওই ছেলেকে নিয়ে আসতে বলি। পরে সাজু তাকে সেখানে ডেকে নিয়ে আসে। ওই ছেলের সাথে পরে আমি কথা বলি। তাকে বকাবকি কিংবা মারধর কোনোটাই করা হয়নি। তাকে শুধু বোঝানো হয়েছে। পরে সে টাকা দিয়ে দিয়েছে। টাকাটা সাজুর ফোনেই ট্রানজেকশন করা হয়েছে।
আরেক অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য তাকবির আহমেদ ইমন বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তাছাড়া জাকির ছাত্রদলের কর্মী আর আমি আহবায়ক সদস্য। তার সহযোগী হিসেবে আমি তো থাকতে পারি না। আমার সিনিয়র কেউ যদি সেখানে থাকত; তবে আমি তার সহযোগী হিসেবে থাকতে পারতাম। ঘটনাটি তাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যু। এটি একান্ত তাদেরই ব্যাপার। জাকির ভাইয়ের সঙ্গে আমার রাত ৮টার দিকে দেখা হয়েছিল। আর যে সময়ের কথা আপনি বলছেন, সেই সময় আমি হলের রিডিং রুমে ছিলাম।
তবে এ ঘটনায় ইমনের সম্পৃক্তার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপস্থিত এক ছাত্রদল কর্মী। তিনি বলেন, আমি বিস্তারিত ঘটনা জানি না। তবে সেদিন রাত ১০টার সময় ইমন ভাই অক্ট্রয় মোড়ে জাকির ভাইয়ের সঙ্গে ছিল।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমার সঙ্গে অনেকেই রাজনীতি করে। কেউ যদি এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার দায় আমি নেব না। আমি সব সময়ই নেতাকর্মীদের কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত না থাকার পরামর্শ দেই।
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকেই চাঁদাবাজি করছে। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। সেই সুযোগ নেই। তবুও যদি কোনো ছাত্রদল নেতা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে এবং তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই দলের সাংগঠনিক অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

